বগুড়া: উত্তরবঙ্গের প্রবেশ দুয়ার খ্যাত এই শহরের রয়েছে বিশেষ সুনাম । শুধু ইতিহাস নয়, ভ্রমনকারীদের জন্যেও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান, ভোজন রসিকদের স্বর্গরাজ্য, কীর্তিমান সূর্য সন্তানদের জন্মভূমি যাদের কারণে বগুড়া আজ বিশ্ব দরবারে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত । আসুন তাহলে একনজরে দেখে নেই –ঐতিহ্য ও গৌরবের নগরীতে যা কিছু বিখ্যাত- বগুড়া
বগুড়ার দই: ইতিহাসের সাক্ষ্য অনুযায়ী এর ইতিাস প্রায় ১৫০ বছর আগের । পরবর্তীতে নবাব আলতাফ আলী চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতায় বগুড়ায় দই এর উৎপাদন শুরু হয় যার নেতৃত্ব দেন তৎকালীন শেরপুরের ঘোষ পরিবারের অন্যতম সদস্য গৌর গোপাল । বিদেশে বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি সর্বপ্রথম ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। ওই বছরের গোড়ার দিকে তৎকালীন বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্যার জন এন্ডারসন বগুড়া নওয়াববাড়ি বেড়াতে এসে প্রথম দইয়ের স্বাদ গ্রহণ করেন। এছাড়াও বগুড়ার দই ব্রিটেনের রানী ভিক্টোরিয়া, রানী এলিজাবেথ থেকে শুরু করে মার্কিন মুল্লুকে অনেকেই খেয়েছেন যা বগুড়ার জন্য গর্বের বিষয়। দৈনিক প্রায় তিন মিলিয়ন টাকার বিকিকিনি হয় দই এর বাজারে । যদিও দই বিক্রেতার সংখ্যা অসংখ্য তা সত্বেও কিছু কিছু দোকান আছে যেগুলোর দই গুণে মানে ও বৈশিষ্ট্যে অনন্য । যেমন এশিয়া, বগুড়া দই ঘর, শ্যামলী, আকবরীয়া, মিষ্টি মহল, মহররম আলী দই ঘর, চিনিপাতা দই, দই বাজার, রুচিতা দই ঘর ইত্যাদি ।
বিখ্যাত ব্যক্তি: উল্লেখযোগ্য কিছু প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গ যাদের কৃত্বিতের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো :
মোহাম্মদ আলী, সাবেক রাষ্ট্রপতি লেফট্যানেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, হাবিবুর রহমান (বুলু মিঞা), রজিব উদ্দীন তরফদার, ফজলুল বারী, ডাঃ হাবিবুর রহমান, আব্দুল বারী বি, এল, ওয়াজেদ হোসেন তরফদার, আজিজুল হক,কবিরাজ শেখ আব্দুল আজিজ, এ,কে মুজিবর রহমান, বেগম মাহমুদা সাদেক, ডাঃ মহম্মদ ইয়াছিন, ডাঃ ননী গোপাল দেবদাস,ডাক্তার টি, আহম্মদ, ডাক্তার এস.আই.এম গোলাম মান্নান,কলিম উদ্দীন আহম্মদ, মজিবর রহমান,গাজীউল হক, অধ্যক্ষ খোদেজা খাতুন, অধ্যাপক এ.কে.এম নুরুল ইসলাম,অধ্যাপক এ.কে আজাদ, কে এম শমসের আলী, এম. শামছুল হক, তাজমিলুর রহমান, রোমেনা আফাজ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, ওস্তাদ আলা উদ্দীন সরকার,বেদার উদ্দীন আহম্মদ, আঞ্জুমানআরা বেগম,খুরশীদ আলম, আজিজুল জলিল (পাশা),প্রফুল্ল চাকী, খাদেমুল বাশার; বীর উত্তম, এম. আর. আখতার মুকুল, মুশফিকুর রহিম, রোমেনা আফাজ.
বিখ্যাত স্থান: ঐতিহাসিক মহাস্তানগড়,জিয়ত কূপ,মহাস্তান যাদুঘর, বেহুলার বাসর ঘর ( গোকুল মেধ ), সারিয়াকান্দি প্রেম যমুনার ঘাট, ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্ক, মোহাম্মদ আলী প্যালেস মিউজিয়াম, সাতমাথা বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার,
বিখ্যাত ধানের হাট: উত্তরের সবচেয়ে বড় ধানের হাট বগুড়ার নন্দিগ্রাম উপজেলার রনবাঘা হাট। প্রতি হাটবারে ২৫ হাজার মণ ধান ক্রয়-বিক্রয় হয় এখানে। হাট বার হলো প্রতি শুক্রবার ও সোমবার। প্রতি হাটে কমপক্ষে ৫০টি ট্রাক ভর্তি হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায় এসব ধান।
তাতঁ শিল্পের বিখ্যাত: বগুড়া জেলার আদমদীঘি ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার অর্ধশত গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠা বস্ত্র কারখানা এখন সুতা ও তাঁতশিল্পে বিখ্যাত এলাকা নামে পরিচিত। আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুরের শাঁওইল গ্রামের কম্বলপল্লীর হাটে সপ্তাহে দু’দিন রোববার ও বুধবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে একটানা বেচাকেনা। পুরাতন কাপড় থেকে সুতা সংগ্রহ, বাছাই এবং কম্বল ও চাদর তৈরির পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ১০ হাজার নারী-পুরুষ সম্পৃক্ত। শীত মৌসুমে এখানকার প্রতি হাটে অন্তত ২ কোটি টাকার শীতবস্ত্র বেচাকেনার ধুমপড়ে যায়। সে হিসাবে শীত মৌসুমের ৪ মাসে তা ৬০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

বগুড়ার বিখ্যাত চাপ এবং কাবাব: ৭ মাথা মোড় থেকে কলোনি যাবার জন্য অটো এবং রিক্সা পাওয়া যায়। অটো ভাড়া ৫ টাকা করে প্রতি জন আর রিক্সায় কলোনী পর্যন্ত ২৫ টাকা ভাড়া। রিক্সা/অটো ওয়ালাকে বললে একেবারে চাপের দোকানের সামনেই নামিয়ে দিবে।দোকানটি বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত মাত্র ৫ ঘন্টার জন্য খোলা থাকে। দিনের অন্য সময় দোকান বন্ধ থাকে।
বগুড়ার ভৌগোলিক পণ্য মরিচ: স্থানীয় চাহিদা পূরণ করার পরেও প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী হচ্ছে । মরিচ উৎপাদনের অনুকূল আবহাওয়া এলাকার মরিচকে বিশেষত্ব দান করেছে । যে কারণে বগুড়ার কৃষি বিভাগ মরিচকে বগুড়ার ভৌগোলিক পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
মহাস্থান গড়ের কটকটি: মহাস্থান যাবেন অথচ কটকটি খাবেন না তা কি হয় ? বগুড়ার দই এবং মরিচ এর পরে যদি কোন জনপ্রিয় বা ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম মুখে আসে তা হতে হবে কটকটি । এই সুস্বাদু খাদ্যটি ৯৯.৯৯ শতাংশই তৈরি হয় বগুড়ায় ।

আকবরিয়া হোটেল কে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই । শতবর্ষের ঐতিহ্য ও গৌরবান্বিত ইতিহাস নিয়ে আজো মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে ্ বগুড়া শহরের থানা রোডে । বর্তমানে জনপ্রিয় এই হোটেলের রয়েছে ৪টি শাখা । আকবর আলীর লাচ্ছা সেমাই এখন বিদেশের বাজারেও রফতানি হয় । বিস্তারি জানতে দেখতে পারেন এই নিবন্ধটি ।
বগুড়ার চিকন সেমাই: দেশজুড়ে আছে যার খ্যাতি। আর ঈদের খাবারের মেন্যুতে বগুড়ার চিকন সেমাই ভিন্ন স্বাদের মাত্রা যোগ করে । আর যে কারণে ঈদ এলেই বেড়ে যায় বগুড়ার চিকন সেমাইয়ের চাহিদা। চিকন সেমাই গ্রাম হিসেবে পরিচিতি বেজোরার সেমাইপল্লী।
পোড়াদহ মেলা: বগুড়া শহর হতে ১১ কিলোমিটার পূর্বদিকে ইছামতির তীরবর্তী পোড়াদহ নামক স্থানে এই মেলা বসে । প্রায় ৪০০ বছর ধরে চলে আসা এই ঐতিহ্য । শুরুতে এই মেলা সন্যাসী মেলা নামে পরিচিত হলেও অনেকে একে জামাই মেলা নামে অভিহিত করে থাকেন । মেলাটি মূলত অনুষ্ঠিত হয় বুধবার । তবে সপ্তাহব্যাপী উৎসব লেগে থাকে । এই মেলার আরেক আকর্ষণ হলো স্থানীয় গ্রামবাসীদের উদ্যোগে আয়োজন করা বউ মেলা – যার বিশেষত্ব হলো এখানে শুধুমাত্র মেয়েরা প্রবেশ করতে পারে । এই মেলার প্রধান আকর্ষণ হলো মাছ । এই মেলায় দুই মন থেকে আড়াই মণ ওজনের বাঘা আইড়, পনের থেকে বিশ কেজি ওজনের রুই, কাৎলা, পাঙ্গাস মাছ পাওয়া যায়। অন্যতম আকর্ষন হলো বিভিন্ন ধরণের বড় বড় আকারের মিষ্টি যার একেকটি মিষ্টি প্রায় দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের হয়ে থাকে।
গাংনগর মেলা: শিবগঞ্জ উপজেলার গাংনগর মেলার ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছর । শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলি ও সৈয়দপুর ইউনিয়ন সীমানায় মেলাটি বসে। মেয়াদ ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত । পূর্বে শিব পুজাকে কেন্দ্র করে মেলা বসলেও নতুন প্রজন্মের কাছে এটি এখন গাংনগর মেলা হিসেবে বেশি পরিচিত।
এছাড়াও যে মেলাগুলি বিখ্যাত তাদের মধ্যে উল্লেখয্যোগ্য হলো কেল্লাপুসি মেলা শেরপুর, লোহাগারা মেলা, কর্পূর, সোনাতলা ।
দেশের একমাত্র মসলা গবেষণা কেন্দ্র: ১৯৯৫ সালে বগুড়ার শিবগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেশের একমাত্র মসলা গবেষণা কেন্দ্র । ৩২ লাখ মেট্রিক টন চাদিার বিপরীতে উৎপাদন মাত্র ১৮ লাখ মেট্রিক টন । এই বিশাল লক্ষ্যমাত্রা পূরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধীনে বগুড়ার শিবগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেশের একমাত্র মসলা গবেষণা কেন্দ্র । এ পর্যন্ত প্রায় ১৭ প্রকার মসলা নিয়ে গবেষণা চলছে যার মধ্যে পেয়াজের নতুন জাত উদ্ভাবন, দারুচিনি, এলাচ, তেজপাতার চাষ পদ্ধতি নিয়েও কাজ চলছে। এই কেন্দ্রের আয়তন প্রায় ২৮ হেক্টর যার মধ্যে ১৮ হেক্টর জমিতে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় । ৩টি আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং ৭টি উপকেন্দ্র নিয়ে ৩০টিরেবেশি দেশি বিদেশী মসলার উপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ।
চন্ডিহারার কলার বাজার, মহাস্থানের কাচা বাজার…
এই নিবন্ধনটি ধারাবহিকভাবে হালনাগাদ (আপডেট) করা হবে । এই নিবন্ধ সংক্রান্ত্র কোন অসংগতি মনে হলে মন্তব্য করতে পারেন অথবা আমাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন । ছবিগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা । চিত্রগ্রাহকের তথ্য হালনাগাদ করা হবে । * বঙ্গভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে আপনিও অবদান রাখতে পারেন । আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন ।
বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামের পাশে বিখ্যাত হওয়ার কারণ দিলে আরো ভাল হতো। যাই হোক ভাল লেগেছে।
ধন্যবাদ, পোষ্টটি পড়ার জন্য । পোষ্টটি বড় হয়ে যাচ্ছিলো যে কারণে দেয়া হয়নি । আশা করি অন্য কোন পোষ্টে শুধুমাত্র বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়েই একটি পোষ্ট হবে ।
একমত
ভাল লাগলো। নিজের জেলা সম্পর্কে নতুন কিছু জানলাম। ধন্যবাদ।
Thank you, I am so happy because Bograr moris picture is may home.
Comment: খুব ভালো লাগলো, নিজের জেলা সম্পর্কে অনেক তথ্যমূলক বিষয় জানতে পেরে।আশা রাখি ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু জানতে পারবো। এই উদ্যোগের সংগে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।…
এখানে উল্লেখিত নাম ‘খাদেমুল বাশার’ কিসের জন্য বিখ্যাত এবং উনি কে জানতে চাচ্ছিলাম। ধন্যবাদ।
খাদেমুল বাশার (১৯৩৫-১৯৭৬), বীর উত্তম, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং বিমান বাহিনী প্রধান ।
[…] […]
একমত এবং গর্বিত অামি
Comment:আমার বাড়ি জয়পুরহাটে আমি বগুড়ায় দীর্ঘ ৫ বছর যাবত থেকে পড়াশুনা করেছি,,বগুড়া অনেক সুন্দর,,,,, বগুড়া আমার প্রিয় শহর,,,
Comment:congrats! for your old & l
atest collections about Bogra.
If I found any more inform u.
Thanks a lot.
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
My love bogra
Comment: Comment: ami gorbito karon ai bogra amar jonmo stthan. ar bisisthoo bakti borgo ar majhay akjon amar apon khalar nam acay.
I am moh. mozaffor hossain (Bablu) Akanda. dup; Bogra. I love my district.
Ilove my district Bogra